স্টাফ রিপোর্টার:: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ ও তাহিরপুরে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকারদের সন্তানরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। রাজনীতিতে স্থানীয় কোন্দলের জের ধরে তারা মনোনয়ন পেতে সুবিধাজনক অস্থানে আছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ তারা মরিয়া হয়ে গুষ দুর্নীতির মাধ্যমেও মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। শেষ মুহুর্তে মনোনয়নের জন্য তারা মরিয়া হয়ে নানা কৌশলও নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে রাজাকার পুত্ররা নৌকার প্রার্থী হওয়ার খবরে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের আদর্শের প্রতি নিবেদিত কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দলীয় আদর্শের প্রতি নিবেদিতদের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এই দুই উপজেলায় কট্টর স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার এবং একাত্তরের দালালদের একাধিক সন্তান দলীয় মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই প্রার্থীদের পিতাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাসহ ধর্ষন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। এসব প্রার্থীদের মুক্তিযুদ্ধকালীন বর্বরতার কথা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
জানা যায় তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামের মুছলিম উদ্দিন তালুকদার ও আব্দুল হাসিম তালুকদারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীতার পক্ষের লোকদের বাড়িঘরে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় তারা নারী নির্যাতন করে বলেও অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সনে এসব অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল। সুনামগঞ্জ সাবডিভিশনাল আদালতে মামলা নং সি/আর ৭৬২/১৯৭২। পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতিতরা স্থানীয় সাংসদ আব্দুজ জহুরের কাছে ৭/০৮/১৯৭২ সনে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের বিরুদ্ধে ওই সময় স্থানীয় সাংসদের কাছে লুটপাটের লিখিত বিবরণও দেন নির্যাতিতরা। জানা গেছে এই অভিযুক্তরাই হলেন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয় প্রত্যাশী সাবেক জেলা যুবলীগ নেতা আতিকুল ইসলাম আতিকের বাবা, চাচা ও দুই ভাই। তারা বাবা মুসলিম তালুকদার, চাচা আব্দুল হাসিম তালুকদার, ভাই জমিরুল ও আমিরুলসহ ১৯৭২ সনে নির্যাতিতরা কোর্টে ও সাংসদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। জানা গেছে ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। মনোনয়ন পেতে সব ধরনের চেষ্টাই চালাচ্ছেন তিনি।
জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে জামালগঞ্জের অভিযুক্ত রাজাকার লাল মিয়ার কনিষ্ট পুত্র ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়জুল করিম মোহন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। লাল মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় এক আতঙ্কিত নাম। তিনি ওই সময় এলাকায় নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বলে এখনো প্রত্যক্ষদর্শী ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রকাশ্যে বলে থাকেন। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবি বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু রচিত ‘রক্তাক্ত একাত্তর’ বইয়েও রাজাকার লাল মিয়ার নাম রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক অপূর্ব শর্মার বইয়েও রাজাকার লাল মিয়ার বর্বরতার প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে। তার সন্তান এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিছবাহ উদ্দিন ভিমখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তিনি জোর প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন মনোনয়নের জন্য। জানা গেছে তার পিতা চিতল মাহমুদপুর গ্রামের হাজী ইউসুফ আলী ছিলেন একজন কুখ্যাত রাজাকার। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার নাম বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবি বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু রচিত ‘রক্তাক্ত একাত্তর’ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক অপূর্ব শর্মার বইয়েও উল্লেখ রয়েছে।
এবার এই দুই উপজেলায় রাজাকার পুত্ররা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ায় ক্ষুব্দ তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা যুদ্ধপরাধীদের সন্তানদের বদলে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অবিচল কর্মীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে শাল্লা উপজেলার দৌলতপুরের কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল খালেকের সন্তানও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে ওই রাজাকার পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা ্ওায়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা কেউ ফোন ধরেননি।
Leave a Reply