জগন্নাথপুর২৪ ডেস্ক:: আখাউড়ায় রিকশার লোভে মাদক মামলায় প্রক্সি দিতে এসে জেলে গেলেন এক দিনমুজুর। এদিকে মামলার প্রকৃত আসামি ভারতে অবস্থান করলেও তাকে আখাউড়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা গেছে।
প্রক্সি দেয়া সেলিম মিয়া (৪৫) আখাউড়া উপজেলার ছোটকুড়িপাইকা গ্রামের বাসিন্দা। আর ওয়ারেন্টভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী হান্নান মেম্বার (৩৫) উপজেলার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
রোববার জেলা দায়রা জজ ইসমাইল হোসেনের আদালতে হান্নানের মামলার শুনানি হয়। আদালত এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় হান্নান মেম্বারের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার নির্দেশ দেয়।
এর আগে গত ১১মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শফিকুল ইসলামের আদালতে হাজির হন একই এলাকার সেলিম মিয়া। আদালতের সঙ্গে জালিয়াতি করে নকল সেজে হাজিরা দিতে যাওয়ায় ওই দিনই তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য দেন সেলিম মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত সূত্র জানায়, হান্নান মেম্বার মাদক মামলায় অভিযুক্ত আসামি। তার পরিবর্ততে গত ১১মার্চ আখাউড়া উপজেলার নুরপুর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী হান্নান মেম্বার পরিচয়ে ছোটকুড়িপাইকা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মিয়া আদালতে হাজিরা দিতে যান। এ সময় অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শফিকুল ইসলাম প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করেন। পরে জেলা করাগারের তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করান। জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক নুরুন্নবী ভূঁইয়ার তদন্তে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হয়ে আসে।
আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে থাকা সেলিম মিয়া বলেন, আখাউড়ার মাদক ব্যবসায়ী হান্নান মেম্বার তাকে একটি রিকশা কিনে দেয়ার প্রলোভন দেয়। সেই সঙ্গে আর্থিক সহায়তার লোভ দেখিয়ে হান্নান মেম্বারের নাম-ঠিকানা মুখস্ত করিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি নবীন হোসেন জানান, প্রতারণার ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত থেকে পাঠানো এজাহারের ভিত্তিতে কারাগারে থাকা প্রতারক সেলিম ও প্রকৃত মাদক চোরাকারবারী হান্নান মেম্বারের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আখাউড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক তাকজিল খলিফা কাজলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে উপজেলা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের তকমা গায়ে লাগিয়ে চতুর হান্নান মাদক চোরাচালানে আখাউড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
যদিও মেয়র তাকজিল খলিফা বলেন, হান্নান মেম্বার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তার জানা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আখাউড়া উপজেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ, একজন চিন্হিত মাদক চোরাকারবারি ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কি করে প্রশাসনের নাকের ডগায় দাপিয়ে বেড়ায়।
তাদের অভিযোগ, ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার প্রতিদিনই বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত একাধিক আসামি আটক করছেন। অথচ গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত মাদক মামলার আসামি থানা পুলিশের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে তাকে আটক করছেন না।
এ ব্যাপারে ওসি বলেন, হান্নান মেম্বার পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সূত্র জানায়, হান্নান মেম্বার ১২ মার্চে আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোস্ট সীমান্তপথে কৌশলে ভারতের ত্রিপুরায় পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সে আখাউড়া সীমান্তের অবৈধপথে এলাকায় একাধিকবার আসা-যাওয়া করছে। এলাকাবাসীর ধারণা, কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রমাণ হিসেবে পরে পাসপোর্ট দেখাবে সে ভারতে ছিল।
উল্লেখ্য, এসব ঘটনায় সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ না করার জন্য কয়েক দিন ধরে হান্নান মেম্বার স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। এদিকে গত ২৬ মার্চ রাত ১২টার পর ‘হান্নান আখাউড়া’ ফেসবুক আইডি থেকে যুগান্তরের আখাউড়া প্রতিনিধি মিশুর নাম উল্লেখ করে হুমকি দেন। এর আগেও ‘আখাউড়ায় ফের তৎপর মাদক চোরাকারবারিরা’ শিরোনামে যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদে মাদক ব্যবসায়ী হান্নানের নাম উল্লেখ করায় আখাউড়া-আগরতলা সড়কপথে বাড়ি ফেরার সময় রাতের আঁধারে হামলা করে হান্নান মেম্বার ও তার সহযোগীরা। ওই হামলায় প্রাণে রক্ষা পান তিনি। এসব বিষয়ে আখাউড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
যুগান্তর
Leave a Reply