বিশেষ প্রতিনিধি::
আগাম বন্যার শঙ্কা কাটিয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হাওরে হাওরে বোরো ফসল কাটার ধুম পড়েছে।
এখন পর্যন্ত ৫০ ভাগ ধান কাটা শেষে হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষিবিভাগ দাবি করেছে।
১৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক জরুরি বার্তায় বলা হয়, ১৫ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কাও করা হয়। এ জন্য হাওরের ৮০ ভাগ ধান পাকলেই দ্রুত কাটতে কৃষকদের অনুরোধ জানান উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ। তবে গত কয়েকদিনের রোদের ঝিলিকে হাসি ফুটেজে কৃষকের প্রাণে।
সরেজমিনে জেলার অন্যতম জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়াসহ কয়েকটি হাওরে ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে সোনার ধানের শীষ বাতাসে দুলছে। আধা পাকা বোরো ধানের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক-কৃষাণি। চৈত্রের শেষের দিকে আগাম জাতের কিছু কিছু জমির ধান কাটা শুরু হলেও পহেলা বৈশাখ আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা শুরু হয়। এরইমধ্যে হাওরের শতভাগ ধান পাকার আগেই আবহাওয়ার পূবার্ভাসে. হাওরের ফসল নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দেয় হাওরবাসীর মধ্যে। ফসল হারানোর শঙ্কায় যখন চিন্তিত কৃষককুল তখন অব্যাহত প্রখর রোদে কৃষকের চোখে মুখে হাসি ফুঁটে উঠে। এছাড়া, জগন্নাথপুরের হাওরাঞ্চল এখনও শুকনো। আশপাশের নদ-নদী, খাল বিলেই নেই পানি। ফলে হাওরে শঙ্কা কেটে হাওরে পুরোরদমে চলছে ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের কাজ।
নলুয়া হাওরের ভুরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, প্রথমে ফসল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলেও এখন আর সেই শঙ্কা নেই। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভয় কেটে গেছে।
দাসনাগাঁও গ্রামের নান্টু দাস বলেন, হাওরজুড়ে ধান কাটার ধুম পড়েছে। হাওর, নদ,নদী, খাল, এখনও অনেকটা শুকনো । ফলে ফসল হারানোর শঙ্কা কেটেছে। এছাড়া বৈশাখে ঝড়, বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
মইয়ার হাওরের ইকড়ছই গ্রামের কৃষক ছাতির আলী বলেন, ৮ কেদার জমিতে বোরো আবাদ করেছি।এরই মধ্যে চার কেদার জমির ফসল কাটা শেষ। অবশিষ্ট জমির ফসল এখনও পুরাপরি পাকা হয়নি। আশা করছি, ৭/৮ দিনের ফসল কাটা কাজ শেষ হয়ে যাবে।
নলুয়া হাওর ব্যষ্টিত চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাটিয়ে প্রতিটি কৃষক পরিবার এখন ব্যস্ত বোরো ফসল ঘরে গোলায় কাজে। এবার ভালো ফসল হয়েছে। হাওরে এখন ধান কাটার উৎসব চলছে।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের সুত্রে মতে, এবার জগন্নাথপুরের ছোট বড় ১৫টি হাওরে ২০ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিনে বোরো আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, জগন্নাথপুরের প্রতিটি হাওরে ধান কাটা পুরোদমে চলছে। যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেঁকেছে, সেই জমির ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের অনুরোধ করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামি মে মাসের ৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ধান কাটার জন্য ৭৪টি মেশিনসহ প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক মাঠে কাজ করছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ বলেন, আমরা সার্বক্ষনিক হাওরের খোঁজ খবর রাখছি।