Site icon জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর

সবচাইতে কম ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা পাবে বেশি সহায়তা, বেশি ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা পাবে কম সহায়তা

জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক :: সুনামগঞ্জের হাওরে এবার আবাদকৃত ধানের ৯০ ভাগেরও বেশি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন তিন লাখেরও বেশি কৃষক পরিবার। তাদের সহায়তায় সরকার দেড়লাখ পরিবারকে তিন মাসের জন্য ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকার বিশেষ সহায়তার যে ঘোষণা দিয়েছে সরকারি সেই সহায়তা সারা জেলায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে উপকারভোগীর তালিকা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয়। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ঘুরে দাঁড়াবার পক্ষে সরকারি এই উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসু হবে না বলে মত নিয়েছেন ফসলহারা মানুষ। জনসংখ্যার অনুপাতে তালিকা পাঠানোর খবরে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে আগাম বন্যায় ফসলহারা কৃষেকদের মাঝে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষীদের অনুকূলে সরকারি এই সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান তারা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকায় দেখা যায়, জনসংখ্যা বেশি থাকায় সর্বনি¤œ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন উপজেলায় সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ছাতক উপজেলায় ৩৬১০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেলেও এই উপজেলায় সরকারি সহায়তা পাবেন ২২ হাজার পরিবার। অপরদিকে শতভাগ বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শাল্লা উপজেলায়। শাল্লায় ১৫১১৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেলেও সরকারি সহায়তা পাবে মাত্র ৮ হাজার পরিবার। জনসংখ্যার অনুপাতে দেড় লাখ মানুষের এই তালিকা করা হয়েছে জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪ টি পৌরসভার জন্য। জেলার চার পৌরসভায় ১৪ হাজার পরিবারকেও হাওরের জন্য বরাদ্দ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস কর্তৃক পাঠানো চিঠিতে দেড় লাখ পরিবারের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেখানে, ছাতকে ২২ হাজার, সুনামগঞ্জে সদরে ১৮ হাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১৩ হাজার, জগন্নাথপুরে ১৭ হাজার, দিরাইয়ে ১৭ হাজার, শাল্লায় ৮ হাজার, দোয়ারাবাজারে ১৩ হাজার, জামালগঞ্জে ৯ হাজার, তাহিরপুরে ১২, বিশ্বম্ভরপুরে ৮ হাজার, ধর্মপাশায় ১৩ হাজার পরিবারকে সহায়তা প্রদানের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ছাতকে ৩৬১০, সুনামগঞ্জে সদরে ১১১৪৫, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১১২০০, জগন্নাথপুরে ১১৫৬০, দিরাইয়ে ১৭৫৫০, শাল্লায় ১৫১০১৫, দোয়ারাবাজারে ৭৭৮৫, জামালগঞ্জে ১৫১০৫ (পাগনার হাওর বাদে), তাহিরপুরে ১৫০৫৪, বিশ্বম্ভরপুরে ৬০০০ হাজার, ধর্মপাশায় ১১১৪৫ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জে অবস্থানরত ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফয়েজুর রহমান বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিলেও গতকাল সন্ধ্যায় তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে তথ্য নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় এনে ভিজিএফ’র নীতিমালা অনুযায়ী এই তালিকা করা হয়েছে। এটি আপাতত পরিবর্তন করা হচ্ছে না।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ‘উপজেলার জনসংখ্যা অনুপাতে যদি সরকারি সহায়তা প্রদানের তালিকা হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্তরা কোন দিনই উপকৃত হবেন না। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাধান্য না দিয়ে যারা তালিকা করে উপরে পাঠিয়েছেন তারা দায়সাড়া কাজ করেছেন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত করে তালিকাটি পুনরায় করার জোর দাবি জানিচ্ছি।’
গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে দুদক কতৃক গণশোনানির দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন এই সংবাদ সম্মেলনে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণারও দাবি জানানো হয়।

Exit mobile version