Site icon জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর

ছাতকের সুরমা সেতু নির্মাণে ধীরগতি দীর্ঘ অপেক্ষায় ৩ লাখ মানুষ

শাহ মো. আখতারুজ্জামান, ছাতক
ছাতকে সুরমা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর চারটি পিলার এক যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। গত বছরের অক্টোবরে পরিকল্পিত অ্যাপ্রোচ ও নেভিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলেও শুরু হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ। এখনও ঝুলে আছে নদীর দুই তীরের ভূমি অধিগ্রহণ। এদিকে সেতু নির্মাণে ধীরগতির কারণে নতুন স্বপ্নে বিভোর এই অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাস ক্রমেই বাড়ছে।

সুরমার উত্তরাঞ্চলের মানুষের বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ২০০৪ সালে ছাতক পৌরসভার বাজনামহল ও নোয়ারাই ইউনিয়নের বারকাপন এলাকায় সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার। ওই বছরের ২৩ আগস্ট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর পর সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছিল এ সেতুটির নির্মাণ কাজ। সেতুটি নির্মাণে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তিন বছর। শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর দুই তীরে সেতুটির চারটি পিলার (স্তম্ভ) নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সেতুর ভবিষ্যৎ। এর পর প্রকল্পটি এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে বাতিল করা হয়। ২০১০ সালে এ সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি নতুন সংশোধিত প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এই আবেদনের পর আবার নতুন করে ১১২ কোটি ৯৯ লাখ ৪৯ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রায় দুই মাস আগে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। সুরমার দুই তীরে প্রায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলেই অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শুরু হবে। সুরমা নদীতে সেতু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলা হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে যেতে ২ ঘণ্টা সময় বাঁচবে। সেতু নির্মাণে ধীর গতির কারণে ছাতক ও দোয়ারাবাজার অঞ্চলের লোকজন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ অংশের কিছু পাকা কাজও হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি। নদীর দক্ষিণ পাড়ে সেতুর ঠিক মুখেই গড়ে উঠেছে আকিজ গ্রুপের কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কারখানা। রয়েছে রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সেতু নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে এডিসি (রেভিনিউ) সেতু এলাকা পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে সেতুর প্রায় ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

বিএনপি নেতা ড. আফসার উদ্দিন বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে শুধু ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলা নয়, বৃহত্তর হাওর জেলার অন্যান্য এলাকাও এই সেতুর উপকার ভোগ করবে।

ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছানাউর রহমান ছানা বলেন, স্বপ্নের সেতুটি নির্মিত হলে ওই অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সজীব আহমদ জানান, মূল সেতুর দরপত্র মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগের ৪টি পিলারের সঙ্গে নতুন ৩টি পিলার সংযোজন করেই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে।

Exit mobile version