Site icon জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর

দেশে ফিরলেন আ,লীগ নেতা মিসবাহ সিরাজ, ফিরেন নি গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হান্নান

জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক ::

ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। শুক্রবার বিকেলে তিনি দেশে ফেরেন। গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ঠিকাদার আব্দুল হান্নানের সাথে ভারত যান সিলেট জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

তবে শুক্রবার মিসবাহ সিরাজ দেশে ফিরলেও ফিরেন নি আব্দুল হান্নান। শুক্রবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের তামাবিল ইমিগ্রেশন দিয়ে পরিবারের আরও দুই সদস্যসহ দেশে ফিরেন মিসবাহ। এরপর সাড়ে ৬টায় তিনি সিলেট শহরে আসেন।

তামাবিল অভিভাবস পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ পরিদর্শক (এসআই) এমএ হান্নান চৌধুরী বলেন, বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে মিসবাহ উদ্দিন স্ত্রী-কন্যাসহ দেশে ফিরেন।

এ ব্যাপারে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জানা যায়, দেশে ফেরার পর তামাবিলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মিসবাহ সিরাজকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তিনি পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবুর রেস্টুরেন্টে নাস্তা করেন। নাস্তা শেষে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন মিসবাহ।

গত মঙ্গলবার দুপুরে হাওরের বাঁধ নির্মানে দুর্নীতি মামলার আসামী আব্দুল হান্নানের সাথে স্বপরিবারের ভারতে যান মিসবাহ সিরাজ। ভারতের শিলংয়ে দুই পরিবার একসাথে ঘুরেও বেড়ান। এসব ছবি নিজেই ফেসবুকে আপ করেন হান্নান।

আলোচিত এই মামলার আসামির প্রকাশ্যে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

সুনামগঞ্জের বোরো ফসল হানির পর গত ২ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২১ নম্বর আসামি করা হয় মেসার্স হান্নান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হান্নান আহমেদকে।

দুদকের মামলায় পাউবোর ১৫ জন ছাড়াও সুনামগঞ্জের ১৩ জন, ঢাকার ৯জন, সিলেটের ৬জন, কুমিল্লার ৩ জন, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সাতক্ষীরার ২ জন করে এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, পটুয়াখালি, খুলনা ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার একজন করে ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছিলেন ফরিদপুরের খন্দকার শাহীন আহমদ, টাঙ্গাইলের মো. আফজালুর রহমান, সুনামগঞ্জের সজীব রঞ্জন দাশ ও সিলেটের আব্দুল হান্নান। হান্নান নয়টি বাঁধের কাজ পেয়েছিলেন।

সিলেট মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।

চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে অকাল বন্যায় সুনামগঞ্জের হাওরের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা ঘটে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সুনামগঞ্জসহ দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জ সফরে গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ২ জুলাই পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা, ৪৬ জন ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।

এ ছাড়া গত ৩ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হক বাদী হয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৪১ জনকে আসামি করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন।

আইনজীবী সমিতির এ মামলায় মোট ৪৬ জন ঠিকাদারকে আসামি করার পাশাপাশি দুদকের মামলার ৬১ জন আসামির সবাই রয়েছেন। আদালতের বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে এই মামলাও দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন।

গত ১৬ আগস্ট মামলার অন্যতম আসামি সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নুর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার খায়রুল হুদা চপল সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে দুদক তাকে গ্রেপ্তার করে।

Exit mobile version