জগন্নাথপুর২৪ ডেস্ক::
শবেবরাতে নিজ বাসায় নামাজ পড়ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরী। এ অবস্থায় তাকে মাথায় আঘাত করে সুরমায় ফেলে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্কটা হয়েছিল। সিলেটে আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় হয়েছে ১৪ বছর পর। আইনজীবী বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলেসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৬ মে) সিলেট ডিভিশনাল স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিচারক মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রামাণিক এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন হলেন, শামসুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ছেলে মো. মাসুদ আহমদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের মো. জাহের আলী ও ছাতকের মো. আনসার আহমেদ। তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে মো. বোরহান উদ্দিন। খালাস পেয়েছেন ইসমাইল হোসেন। এরমধ্যে মাসুদ আহমদ চৌধুরী ও জাহের আলী পলতাক রয়েছেন। অন্য আসামিরা জামিনের পর থেকে পলাতক।
সিলেট বিভাগীয় স্পেশাল জজ কোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আনছারুজ্জামান জানিয়েছেন, মামলার ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে নামাজরত অবস্থায় আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে তার ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না পেছন থেকে প্রথমে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এরপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে আইনজীবী শামসুল ইসলামকে অচেতন অবস্থায় গাড়িতে তুলে সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর এলাকার সুরমা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এর কয়েকদিন পর সুনামগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে সুরমা নদীতে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
২০১১ সালে ১৭ জুলাই থেকে আইনজবী শামসুল ইসলাম চৌধুরী নিখোঁজ রয়েছেন জানিয়ে ১৮ জুলাই সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী (মৃতদণ্ডপ্রাপ্ত)। শামসুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট নগরের মিরবক্সটুলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করার চার দিন পর ২২ জুলাই থেকে মাসুদ নিজে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে শামসুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী ৪ আগস্ট ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৫ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করে মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। আদালতে দীর্ঘ শুনানি শেষে মঙ্গলবার মামলার রায় হয়।
শামসুল ইসলাম চৌধুরীর চার মেয়ে দুই ছেলে। বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী এই মামলার বাদী। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম এহিয়া চৌধুরী সোহেল। সিলেটে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট বদরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, পৃথিবীতে বাবা-ছেলের মধুর সম্পর্ক থাকে। বৃদ্ধ বয়সে এসে বাবা ছেলের সহায়তা চেয়ে থাকেন। সে অবস্থায় তাকে জমি সংক্রান্ত জের ধরে হত্যা করা হয়। এই রায়ের মাধ্যমে নির্মম এ ঘটনায় জড়িতরা সাজা ভোগ করলে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।