আশিক মিয়া, দোয়ারাবাজার
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বরসহ একই পরিবারের ৭জন নিহতের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজন হারানোর বেদনায় কান্নার রোল পড়েছে নিহতদের পরিবারে। ওই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। বরের আরেক ভাই আরব আলীও ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। ফলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ এ।
গত বৃহষ্পতিবার বিকালে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের মুকিরগাঁও গ্রাম থেকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে নোয়াখালী যাওয়ার পথে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর থানার বটেরতল এলাকায় বর সহ যাত্রীবাহী গাড়ীটি অপর প্রান্ত থেকে আসা মালবাহী ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগলে বর, শিশু ও নারীসহ ৭জন মারা যান।
শুক্রবার বিকালে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসা হলে চারিদিকে স্বজন হারানোদের কান্নায় গ্রামের বাতাস বাড়ি হয়ে ওঠে। মৃত তিন পুত্রের সারিবদ্ধ লাশ জড়িয়ে হতভাগিনী মা তাজিরুন নেছা বিলাপ করতে থাকেন। বার বার জ্ঞান হারিয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পাড়া প্রতিবেশীও তখন হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন।
নিহতরা হলেন, উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের মুকিরগাঁও গ্রামের মৃত. জমির আলীর ছেলে বর আনসার আলী (২৬), বরের আপন ভাই (গাড়ী চালক) আমীর আলী (৩৫) ও আরব আলী (২০), ভগ্নিপতি ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মিরাস আলী (৩৫), বরের নিকাটত্মীয়র স্ত্রী পারভীন আক্তার (২৭) ও তার শিশু কন্যা জাহানারা বেগম (৫), ফুফাতো ভাই আনফর আলী (২৬)।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বরের আপন চাচা একই গ্রামের আব্দুল খালেক ও ফকির আলীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত বর হাফিজ আনসার আলী নোয়াখালির একজি মসজিদে গত তিন বছর যাবৎ ইমামতি করে আসছেন। সেই সুবাদে আনছার আলীর বিয়ে ঠিকঠাক হয় সেখানে। তার দুই ভাই আগেই গিয়েছিলেন কনের বাড়িতে শাড়ী ও স্বর্ণালংকার নিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রওয়ানা হয়ে রাতে সেখানে পৌছে পরের দিন শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য ছিল।
এদিকে নিহত বর ও তার এক ভাইকে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় নিজ বাড়ীতে জানাযা শেষে দাফন করা হয়। অন্য নিহতদের মধ্যে বরের অপর ভাই গাড়ী চালক আমীর আলীকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে, ভগ্নিপতি মিরাস আলীকে ছাতকের মির্জাপুরে, নিকটাত্মীয় পারভীন আক্তার ও তার শিশু কন্যা জাহানারা বেগমের লাশ পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে দাফন করা হবে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি সুশীল রঞ্জন দাস বলেছেন, ‘তিনজনের লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়েছে অন্যদের লাশ নিজ নিজ বাড়ীতে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
এদিকে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৭ জনের নিহতের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ উপজেলার সর্বত্র এখন শোকাবহ পরিবেশ তৈরি করেছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাপা’র সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুল মজিদ মাস্টার, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, যুগ্ম আহবায়ক সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, জেলা জাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনম অহিদ কনা মিয়া, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা জাপা’র সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম, দোয়ারাবাজার প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
Leave a Reply